সন্তান জন্মদানের পর প্রথম যে হলুদাভাব, আঠালো দুধ নিঃসৃত হয় সেটাকে শাল দুধ বলে। মায়ের বুকের দুধ শিশুর পুষ্টির সঠিক উৎসই নয় পাশাপাশি শিশু সুস্বাস্থ্যের ও সুষম বিকাশের জন্য একটি অপরিহার্য। একটি নবজাতকের প্রথম টিকা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধক সকল উপাদান পাওয়া যায়। বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই। কোনো শিশুখাদ্য মায়ের দুধের সমকক্ষ হবার বিন্দুমাত্র যোগ্যতা রাখে না।
শিশুর জন্মের পর থেকে দুই মাস পর্যন্ত তাকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর, দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর আর ছয় মাস পরবর্তী সময় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পর পর মায়ের বুকের দুধ পান করানো উচিত। মায়ের দুধের স্বাস্থ্যগত ও পুষ্টিগত উপকারিতা বর্ণনা করে শেষ করা যায় না।
মায়ের দুধের ৭টি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা :
১. যেসব শিশুরা বুকের নিয়ম মেনে অর্থাৎ ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ আর দুই বছর পর্যন্ত বাড়তি খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধ পান করে তাদের মৃত্যুহার যারা বুকের দুধ পান করে না সেই শিশুদের তুলনায় ১৪ গুণ কম।
ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন এর তথ্য মতে শিশুকে জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে যদি বুকের দুধ পান করানো হয় সেক্ষেত্রে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ৩১ শতাংশ কমে যায়।
২. মায়ের বুকের দুধ বিভিন্ন এন্টিবডিতে ভরা যা শিশুকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। যেসব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করে না বা সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে মায়ের বুকের দুধ পান করে না তাদের নিউমোনিয়া ডায়রিয়া ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
৩. যেসব শিশুর জন্ম পরবর্তী ছয় মাস এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং (শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করবে এমনকি একফোঁটা পানিও পান করবে না) তাদের বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগ, কণ্ঠনালী ও কানের ইনফেকশন জনিত বিভিন্ন রোগের আশংকা কমে যায় । ৪. যেসব শিশুর বুকের দুধ পান করে তাদের পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগের আক্রান্ত হওয়াসহ, অ্যাজমা, একজিমা ও অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি কম।
৫. যে শিশুরা মায়ের বুকের দুধ দুই বছর পর্যন্ত পান করে এবং এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং করে তাদের বুদ্ধিমত্তা যারা মায়ের দুধ সঠিকভাবে পান করে না তাদের তুলনায় অনেক বেশি এবং তাদের মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে মায়ের বুকের দুধে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান।
৬. এসকল শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করে তাদের সাথে মায়ের আত্মিক বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে ফলে সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ে ও আস্থা তৈরি হয়।
৭. মায়ের দুধে যে উপাদান রয়েছে তাতে শিশুর ক্যান্সার প্রতিরোধ সহায়ক হয়। এছাড়াও জীবনের পরবর্তী পর্যায়গুলোতে ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য ও কিছু কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে যে সকল শিশুর জন্মের পর সঠিকভাবে নিয়ম মেনে মায়ের বুকের দুধ পান করে তাদের। আর তাদের জীবনে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে হাড় ও অস্থির গঠন মজবুত থাকে।