দেওয়ান মশিউর রেজা চৌধুরী: মানুষের বাধা, সমালোচনা, গীবত আর হুমকি-ধামকিতে কি আপনি থেমে যাবেন? না থেমে গেলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, আপনাকে মানুষ নানাভাবে বিরক্ত করবে, সমালোচনা করবে এবং আপনাকে নিয়ে কটূক্তি করবে। জীবনে সফলতা অর্জন করতে গেলে বাধা আসবে, ব্যর্থতা আসবে। কিন্তু বাধা পেয়ে থেমে গেলে চলবে না।নিজের বিশ্বাসে অটুট থেকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের ভেতরে স্বপ্নকে লালন করতে হবে। জগতে সফল মানুষেরা এসব লোক-সমালোচনা বা কটূক্তি বিন্দুমাত্র পাত্তা দেন নাই। তারা যথাসম্ভব এসব মানুষকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। আর যারা অন্যের সমালোচনা শুনে নিজেকে সংশোধন করে বা অন্যের কথা মতো নিজের জীবন চালায়, তারা কোনো দিন সফল হয় না। এরা শুধু শুধু অন্যের কথায় দুঃখ পায়, কষ্ট পায় এবং তাদের কথামত সমাজে চলার চেষ্টা করে। সফল ব্যক্তিরা অন্যের সমালোচনাকে একদম পাত্তা দেয় না এবং নিজেদের জীবন থেকে ঐসব ব্যক্তিদের অনেক দূরে সরিয়ে রাখেন। কারন সফল ব্যক্তিরা জানে, নিন্দুকেরা কখনো কারও ভালো চায় না। নিন্দুকেরা অন্যের ভালো একদম সহ্য করতে পারে না। নিন্দুকেরা সাধারণত বন্ধু, আত্মীয় বা প্রতিবেশী হয়। কেননা একজন অপরিচিত ব্যক্তি কখনো আপনার নিন্দা করবে না। সফল ব্যক্তিরা জানে, নিন্দুক ও শত্রু দুই–ই কাছের মানুষ হয়। তাই জীবনে সফল হতে হলে আপনার সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত। কারণ সফল ব্যক্তিরা জানে, তারা অন্যের চেয়ে অসাধারণ তাই নিন্দুকের কাতারে না যাওয়া উত্তম। আপনার জীবন পথে ভালো কিছু করতে গেলে অন্যরা আপনাকে কাঁকড়ার মতো নিচে টেনে আনার চেষ্টা করবে। অথবা, আপনাকে নানা ধরনের কথা বলে আপনার চিন্তা–ধারণার সম্পর্কে সন্দেহ জাগানোর চেষ্টা করবে। সফল ব্যক্তিরা সমাজে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করে। এতে তাদের নানা সমালোচনা বা সমস্যার মুখে পড়তে হয়। যারা মানুষের কথা শুনে নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তারা কোনো দিন উন্নতি করতে পারে না। এর মানে এই নয়, অন্যের কথায় একদম কান দিতে হবে না। অন্যদের কথা শুনে তার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য যাচাই করা উচিত। কিন্তু নিজের ওপর বিশ্বাস হারানো একদম উচিত নয়। সফল ব্যক্তিরা নিজের প্রতি দারুণ আস্থা রাখে । যেমন-কোন ব্যক্তি তাদের নামে ফেসবুকে কটূক্তি করলে তারা সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে ব্লক করে দেয়। অথবা, কোন ব্যক্তি তাদের সামনে হিংসাত্মক মন্তব্য করলে তাদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে। এর কারণ হচ্ছে, আপনি যতই ওই সব ব্যক্তির আশপাশে থাকবেন, ফেসবুকে কটূক্তি নিয়ে ভাববেন আপনার জীবন তত নেগেটিভ হয়ে যাবে। আপনার সৃষ্টিশীলতা কমে যাবে। নিজের প্রতি আপনার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। সফল ব্যক্তিরা সব সময় হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করে। আপনি সব সময় মনমরা থাকলে অন্যরা আপনার দুর্বলতার সুযোগ নেবে। হাসি-খুশি মানুষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ হাসি-খুশি থাকা মানুষের স্বভাব একটি মহৎ গুন। একবার চিন্তা করুন, যদি একটি বাঘ মনমরা হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে, তাহলে তার কী অবস্থা হবে। হ্যাঁ, সঠিক আন্দাজ করেছেন। একটি বাঘ মনমরা হয়ে মাটিতে পড়ে থাকলে অন্যরা তার ওপর অত্যাচার শুরু করে দেবে। কারণ বাঘ গর্জন করবে তার চেহারায় দূরদর্শিতা থাকবে এটাই স্বভাব। আপনি হাসি খুশি থাকলে অন্যরা দ্বিধায় পড়ে যাবে। আপনাকে হাসি খুশি দেখে তারা হিংসা করবে নিশ্চয়, কিন্তু ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ তারা তাদের আসল পরিকল্পনা রেখে আপনার হাসি খুশি রহস্য খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরবে। কিন্তু আপনি মনমরা থাকলে তারা আপনাকে কুযুক্তি দেবে এবং নানা কথা ‘উপদেশ’ হিসেবে বিনে পয়সায় দিয়ে যাবে। আসল সেগুলো উপদেশ নয়। আপনার জীবনকে বরং আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। তাতে তাদের লাভ কি? এমন প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে। মানুষ সারা জীবনে সুখের পেছনে ঘোরে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের জীবনে নানা কষ্ট–দুঃখ পরিপূর্ণ থাকে। শত চেষ্টা করেও তারা সুখের সন্ধান পায় না। তাই তারা আপনাকে যত কষ্টে দেখবে, তারা তত সুখ পাবে। তাদের মানসিক সুখের জন্যই আপনার অমঙ্গল কামনা করবে। সফল মানুষেরা ফলাফল নিয়ে চিন্তা না করে শুধু কর্ম করে যায়। কারণ তাদের ফলাফল নিয়ে চিন্তা করার সময় থাকে না। তারা জানে, কাজ করলে ফল আসবেই। অন্যরা যখন তাদের সামান্য সাফল্যকে উদ্যাপন করতে ব্যস্ত থাকে, তখন সফল ব্যক্তিরা শুধু কাজ করে যায়। মানুষের কোন কাজ বিফলে যায় না। তবে বিজয়ী হতে হলে আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে। জীবনে কোনো কিছুই সহজলভ্য নয়। যেহেতু সাফল্য সহজলভ্য নয়, তাই ঝুঁকি নিতেই হবে। ঝুঁকি না নিলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাওয়া যায় না। তাই বলে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি নিলে হবে না। আসুন লোক-সমালোচনা বা কটূক্তি বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে। নিজের বিশ্বাসে অটুট থেকে এগিয়ে যাই আগামীর দিখে সফলতার বিজয়ী মঞ্চে।