কোমরে ব্যথার কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

কোমরে ব্যথার কারণ, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা;জেনে নিন ঘরোয়া সমাধান

কোমরে ব্যথা সাধারণ রোগ মনে করলেও কিন্তু এই কোমরে ব্যথাও অনেক সময় বড় ধরণের রোগে পরিণত হতে পারে।  মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে অজস্র মানুষ কোমরের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা যাকে ‘কোমর’ বলি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে বলে লাম্বার স্পাইন। ভুল ভঙ্গিমায় শোওয়া-বসা, হাঁটা চলা, সামনে ঝুঁকে ভারী জিনিস তোলা বা কখনও কখনও রিকশা, অটো বা বাসে ঝাঁকুনি লেগেও কোমরে ব্যথা শুরু হতে পারে। বেশি বয়সে হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মাঝখানে যে ডিস্ক আছে, তাও ক্ষয়ে যায় বলে ব্যথা শুরু হয়, একে বলে ‘স্পন্ডাইলোসিস’।

 

কোমরে ব্যথার কারণ:

অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করলে কোমরে ব্যথা প্রচণ্ড হয়ে থাকে। বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে। যাঁরা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা অন্য কাজ করেন, তাঁদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। অনেকেই আছেন যাঁরা কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।

 

লক্ষণ:

প্রথম দিকে এ ব্যথা কম থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে। কোমরে সামান্য নড়াচড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথার সঙ্গে পায়ে ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিঁচে আসে বা আটকে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা যে কোনো এক পায়ে নামতে পারে। কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যাওয়া। প্রাত্যহিক কাজে, যেমন- নামাজ পড়া, তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদিতে কোমরের ব্যথা বেড়ে যায়।

 

ব্যথা কমার ব্যায়াম: 

এই ব্যায়াম প্রতিদিন রাতে ও সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়ে করতে পারেন। সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৭ মিনিট। সমতল হালকা নরম বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত শরীরের দুই পাশে রেখে দুই পা সোজা করে শুতে হবে। হাঁটু ভাঁজ না করে এক পা ওপরের দিকে তুলুন যত দূর সম্ভব। ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে। একইভাবে অপর পা ওপরে তুলুন এবং একই সময় নিন। এবার একইভাবে হাঁটু ভাঁজ না করে একসঙ্গে দুই পা তুলুন এবং একই সময় নিন। এবার এক হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটুকে বুকে লাগানোর চেষ্টা করুন। ১০ সেকেন্ড থাকুন। একইভাবে অপর হাঁটু বুকে লাগাতে হবে। একসঙ্গে দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাতে জড়িয়ে বুকে লাগাতে হবে। সর্বশেষ দুই পা সোজা করে পায়ের পাতার দিকে সটান করে ১০ সেকেন্ড রাখতে হবে। প্রতিটি ধাপ ১০ সেকেন্ড দীর্ঘায়িত হবে বা ১০ গোনা পর্যন্ত করতে হবে।

 

চিকিৎসা:

  • হালকা ব্যথা হলে অবহেলা না করে ওষুধ এবং পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। কোমরে গরম ভাপ দিলে উপকার পেতে পারেন। কোমর ব্যথার বিভিন্ন মলম ব্যবহার করতে পারেন। তবে মালিশ করা যাবে না।
  • ব্যথা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট কিংবা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যথা তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি থেকে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়।
  • অনেকেই কোমর ব্যথা হলে বিভিন্ন ব্যথা নাশক ওষুধ খেয়ে ফেলে। এটা একেবারে ঠিক নয়। বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।
  • ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও এমন ওষুধ তৈরি হয়নি যে ওষুধ খেলে আপনার মাংসপেশি লম্বা হবে, শক্তিশালী হবে এবং আপনার জয়েন্ট মবিলিটি বেড়ে যাবে।

কিডনিতে স্টোন হলে, প্যাংক্রিয়াসের অসুখ হলে, স্পাইনা-বাইফিডা নামে জন্মগত ত্রুটি থাকলে, বা অন্য কোনও বড় অসুখের উপসর্গ হিসেবেও কোমরের ব্যথা হতে পারে। টানা তিন মাস যদি কেউ কোমরের ব্যথায় কষ্ট পান, কোমরের পাশাপাশি পায়ের পেশিতেও টান ধরে বা অবশ হয়ে যায়, প্রস্রাবে বা মলত্যাগে সমস্যা হয়, তা হলে অন্য কোনও বড় অসুখের কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজন হলে এমআরআই করতে হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *